ঢাকাস্থ আলজেরিয়ান দূতাবাসে ১৯৪৫ সালের গণহত্যার ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে, ২০২৫) এক স্মরণীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। “স্মৃতির দিন – একটি কাঙ্ক্ষিত যুগের জন্য এক স্মরণীয় দিন” প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কূটনীতিক, সাংবাদিক, প্রবাসী আলজেরিয়ান নাগরিক, ও অন্যান্য গণ্যমান্য অতিথিরা।

আলজেরিয়ার ইতিহাসের এক করুণ ও গৌরবময় অধ্যায় স্মরণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, “আজ আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ দিনের স্মরণে একত্রিত হয়েছি—৮ মে ১৯৪৫। এই দিনটি আমাদের ইতিহাসে শুধু একটি গণহত্যার দিন নয়, বরং স্বাধীনতার জন্য আমাদের সংগ্রামের সূচনাবিন্দু।”
তিনি উল্লেখ করেন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফরাসি বাহিনীর পক্ষে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করা সত্ত্বেও, আলজেরিয়ানদের প্রতি ফ্রান্স তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। বরং, ১৯৪৫ সালের ৮ মে, যখন সারা বিশ্ব নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয় উদযাপন করছিল, ঠিক তখনই সেতিফ, গেলমা ও খেরাতা শহরে স্বাধীনতার দাবিতে আলজেরিয়ানদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ফরাসি উপনিবেশিক বাহিনী নির্মমভাবে হামলা চালায়।
রাষ্ট্রদূত জানান, মাত্র ১৭ বছর বয়সী স্কাউট বুজিদ চালের হাতে ছিল আলজেরিয়ার পতাকা—স্বাধীনতার প্রতীক। তাকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর শুরু হয় একটি পরিকল্পিত গণহত্যা। কয়েক দিনের মধ্যেই ৪৫,০০০ এরও বেশি আলজেরিয়ান নিহত হন। গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করা হয়, কৃষিজমি ও গবাদিপশু পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই নৃশংসতা আলজেরিয়ার জাতীয় চেতনাকে জাগ্রত করে এবং স্বাধীনতা আন্দোলন নতুন মোড় নেয়। ১৯৪৭ সালে গঠিত হয় l’Organization Spéciale (OS), যার মাধ্যমে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা ঘটে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “আজকের স্বাধীন আলজেরিয়া শিক্ষা, অবকাঠামো, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে আলজেরিয়া শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”
তিনি বাংলাদেশ ও আলজেরিয়ার মধ্যকার সুদৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রশংসা করেন এবং বলেন, “দুই দেশ একই সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।”
অনুষ্ঠানের শেষাংশে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং “গৌরব ও চিরকালীন শ্রদ্ধা আমাদের শহীদদের প্রতি” শ্লোগানে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।