সোমবার (২৮ জুলাই, ২০২৫) ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে বাংলাদেশে অবস্থিত মালদ্বীপ হাই কমিশনের আয়োজনে উদযাপিত হলো মালদ্বীপের স্বাধীনতার ৬০তম বার্ষিকী (60th Anniversary of Maldivian Independence)। এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, কূটনৈতিক অগ্রগতি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার নানা দিক উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোয় মালদ্বীপ হাই কমিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং মালদ্বীপ সফরের এক আবেগঘন স্মৃতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “২০১৩ সালে আমি মালদ্বীপে গিয়েছিলাম। তখন ব্লু মালয় নির্মাণাধীন ছিল। সেখানে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছিলেন। রমজান চলছিল, তারা ইফতার করছিলেন। আমি ও ড. কামাল হোসেন, যিনি SAARC Fact Finding Commission-এর সদস্য ছিলেন, আমন্ত্রিত হয়ে তাদের সঙ্গে ইফতার করি। তারা ছিলেন খুবই আনন্দিত এবং মালদ্বীপবাসীর আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের কথা বলছিলেন।”
ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, “বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে। আমাদের সহযোগিতা বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং পর্যটন খাতে বিস্তৃত। যদিও বর্তমানে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তবে এটি আরও বিস্তৃত করার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।”

অনুষ্ঠানে মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনিন রাশিদ (Shiuneen Rasheed) সকল অতিথিকে উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি উত্তরায় সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সহানুভূতি জানান। তিনি বলেন, মালদ্বীপ আজ একটি সম্মানিত দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত, বিশেষ করে পর্যটন খাতে নেতৃত্ব, জলবায়ু ইস্যুতে সোচ্চার ভূমিকা এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে কার্যকর অবস্থানের জন্য।
তিনি আরও বলেন, “আজকের এই উদযাপন হতো অসম্পূর্ণ যদি আমরা আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশকে সম্মান না জানাতাম। ১৯৭৮ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে শুধু সামুদ্রিক সীমানা নয়, বরং সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, অনুপ্রেরণা ও গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সংহতির ভিত্তিতে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারিদা আক্তার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস. মুর্শিদ এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী।
উল্লেখ্য, মালদ্বীপের স্বাধীনতার ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এদিন একটি বিশেষ সংগীতও প্রকাশ করা হয়, যা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের মধ্যে আনন্দ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করে।
অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।