দেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই, ২০২৫) জাতিসংঘ আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে তিনি বলেন, “গত বছরের এই দিনে হাজার হাজার মানুষ—বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম—স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের সম্মান ও ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধার করেছিল।”
প্রফেসর ইউনূস তার বক্তব্যে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট ২০২৪ সালের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের (OHCHR) ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “এই নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন কেবল ন্যায়বিচারের জন্য নয়, জাতিগত নিরাময়ের জন্যও অপরিহার্য ছিল।”

তিনি উল্লেখ করেন, ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ প্রকাশিত ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্টে দেখা যায়, ঐ সময়কালে অন্তত ১,৪০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। প্রতিবেদনে এই সহিংসতাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত, সংগঠিত এবং পূর্ববর্তী সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে পরিচালিত’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া বিবিসি ও আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেও এই দাবির সত্যতা প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি রোধে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধন, জবরদস্তি গুম প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর, এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে একটি সহযোগিতা মিশন চালুর সমঝোতা স্মারক (MoU) সই। এই মিশন সরকার, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও সুশীল সমাজকে কারিগরি সহায়তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মার্চ ২০২৫ সালের বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অন্ধকার সময়ে জাতিসংঘ ছিল আমাদের সবচেয়ে দৃঢ় মিত্র। আমি জাতিসংঘের উচ্চকমিশনার ভলকার তুর্ক, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিমের সদস্য, রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটর গ্যুইন লুইস এবং মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন একটি নতুন রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো সরকার জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারে।”
প্রফেসর ইউনূস তার বক্তব্যের শেষাংশে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, “তাদের আত্মত্যাগ আমাদের জন্য একটি নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে—একটি বাংলাদেশ যেখানে আছে আশার আলো, মানবাধিকার, এবং গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ।”
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা ছাড়াও কূটনীতিক, গবেষক, ও নাগরিক সমাজের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।