বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চতুর্থ দফা পরামর্শ বৈঠক (Foreign Office Consultations–FOC) মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট ২০২৫) সিউলে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক (পূর্ব ও পশ্চিম) বিভাগের সচিব রাষ্ট্রদূত ড. মো. নাজরুল ইসলাম। কোরিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির প্রথম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. পার্ক ইউনজু।

উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে গঠনমূলক ও ভবিষ্যত-মুখী আলোচনা হয়, যেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিস্তৃত ক্ষেত্রগুলো আলোচিত হয়। আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল—রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) এর অধীনে মানবসম্পদ উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, কোরিয়ান ইলেকট্রনিক্স ও সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন কারখানা স্থানান্তর, জ্বালানি সহযোগিতা, নিরাপত্তা এবং বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) পরিস্থিতি। এছাড়া উভয়পক্ষ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়েও মতবিনিময় করে।
২০১২ সালের মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় দফা পরামর্শ বৈঠকের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করে। এর মধ্যে ছিল—বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জ্বালানি রূপান্তর, মৎস্য খাত, জৈবপ্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং সমুদ্রবন্দর ও জাহাজশিল্প আধুনিকায়ন।
উভয়পক্ষ রাজনৈতিক আস্থা জোরদার ও উন্নয়ন কৌশল সমন্বয়ের বিষয়ে একমত হয়। কোরিয়া জানায়, তারা বাংলাদেশে উচ্চমানের অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে ইডিসিএফ (EDCF), কোইকা (KOICA) এবং ইডিপিএফ (EDPF) এর অনুদান ও ঋণের মাধ্যমে সহায়তা অব্যাহত রাখবে। একইসঙ্গে কোরিয়ান উৎপাদন কারখানা ও প্রোডাকশন হাউসগুলোকে বাংলাদেশে শিল্প মূল্যশৃঙ্খল সম্প্রসারণে উৎসাহিত করবে। দক্ষিণ কোরিয়া দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখার আগ্রহও প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ইপিএস প্রোগ্রামের অধীনে নিয়মিত অভিবাসন এবং এসটিইএম ও টিভিইটি শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানায়। কোরিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মানবিক ভূমিকাকে প্রশংসা করা হয় এবং মিয়ানমারে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেওয়া হয়। পাশাপাশি চলমান মানবিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
দুই দেশই রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান পর্যায়ের উচ্চ পর্যায়ের সফরের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়, যাতে বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে উন্নীত করা যায়।
এছাড়া উভয় প্রতিনিধি দল গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে এবং বহুপাক্ষিক বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। বৈঠক শেষে দুই দেশ পারস্পরিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্পদ, কৌশলগত সুবিধা ও পরিপূরকতা সর্বোচ্চ ব্যবহারের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।
সচিব নাজরুল ইসলাম কোরিয়ার প্রথম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও জোরদার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।