‘চলতি বছর চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিনিময়ের বছর’’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ইয়ুননান প্রাদেশিক সরকার এবং ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের যৌথ আয়োজনে ইয়ুননান শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে। রোববার (২০ এপ্রিল, ২০২৫) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে প্রচারমূলক এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
বাংলাদেশ ও চীনের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে, এই আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এসময় সম্প্রতি চীন থেকে বাংলাদেশিদের জন্য দেওয়া বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, এই বছর, ইউনান বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসার জন্য চারটি হাসপাতাল মনোনীত করেছে।

ইয়ুননানের মতো চীনের আরও বিভিন্ন প্রদেশ এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় প্রচার এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিনিময় আরও সহজ করতে স্থানীয় পর্যায়ে সহযোগিতা আরও গভীর করতে হবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
‘আমরা রোগীদের চিকিৎসার জন্য চীনে যাওয়ার জন্য সমস্ত ভিসা সুবিধা প্রদান করবে চীন দূতাবাস। আমি মনে করি, অদূর ভবিষ্যতে, বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার রোগী চিকিৎসার জন্য ইয়ুননানে যাবেন। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে ইয়ুননান ভ্রমণের সময় তারা সর্বোত্তম পরিষেবা পাবেন।’
এসময় ভবিষ্যতে আরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দুই দেশের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরও সহযোগিতা বৃদ্ধির আশ্বাস দেন তিনি।
এসময় ইয়ুননানের প্রাদেশিক গভর্নর ওয়াং ইউপো জানান, চীনের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালগুলোর সাথে সহযোগিতায়, কার্ডিওভাসকুলার, অনকোলজি, শ্বাসযন্ত্র এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ জাতীয় আঞ্চলিক চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে ইয়ুননান। বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিষয়ক বেশ কিছু ক্ষেত্রে কাজ করতে আগ্রহী ইয়ুননান বলেও জানান তিনি।
‘আমরা রোগ প্রতিরোধ, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, বয়স্ক স্বাস্থ্যসেবা, সেইসাথে চোখের ছানি রোগীদের জন্য ব্রাইটনেস অ্যাকশন এবং সিএইচডি প্রোগ্রামের মতো জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও গভীর করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। আমরা যৌথ সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা মডেলগুলোও অন্বেষণ করার লক্ষ্য রাখি।’
এসময় তিনি পর্যটনের প্রচার, ভ্রমণ রুট উন্নয়ন এবং পণ্য উদ্ভাবনের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার আশা প্রকাশ করেন এবং উভয় অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের উচ্চমানের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে একসাথে কাজ করার কথা জানান।
কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে চীন বাংলাদেশে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ১,০০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণে সহায়তা করতে যাচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে সহায়তা করার জন্য, চীন সরকার ঢাকার ধামরাইতে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট পুনর্বাসন হাসপাতাল নির্মাণ করবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ইয়ুননানের পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সহযোগিতা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, দুই দেশের প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং প্রতিনিধিদলসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন অতিথিরা। এদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।